1/23/2008

সব গল্পেরই যেমন একটা শুরু থাকে

বাংলা ভাষা সংক্রান্ত একটি ব্লগ প্রায় বছর তিনেক এবং খবরের কাগজে সম্পাদক এবং লেখকদের প্রতিদিনের কিছু কিছু ঘটনা নিয়ে সে সংক্রান্ত একটি ব্লগ প্রায় দু’বছর ধরে চালানোর পর বাংলা হরফ নিয়ে একটি ব্লগ খোলার প্রয়োজন পড়ে। আশা ছিল মেটাফন্টে বাংলার একটি হরফের রোজনামচা লেখার; অন্তত ভবিষ্যতে যারা বাংলা হরফ নিয়ে কাজ করবে তাদের কিঞ্চিৎ সুবিধে হবার কথা। সে কাজ থেমে আছে; পেশাগত চাপের কারণে, দৈনন্দিন বিশৃংখলায় এবং এরকম অনেক কিছুর জন্য যার দায়িত্ব প্রধানত এবং প্রথমত আমার। আরও তিনটে ব্লগ ছিল এবং এদের কোনওটাই এগোয় নি খুব বেশি।

লিনক্ষ (রোমান হরফের Linux, বাংলা উচ্চারণে লিনুক্স -- লিনুস থুরভাল্‌দ্‌সের নিজের ভাষায়, ই-কারটি হ্রস্ব (যদিও সুয়েডীয় ভাষায় স্বরটি দীর্ঘ) আর উ-কারটি কিঞ্চিৎ অন্যরকম; ইংরেজিতে সাধারণ উচ্চারণ লিনাক্স (দ্বিতীয় স্বরটি হিব্রুর শোয়া’র মত) — লিন্যক্সও লেখা যেতে পারে। তবে ঝোঁকটা প্রথম অক্ষরে। বাংলায় লিনাক্স লেখাটাই দস্তুর। পুরনো বাংলায়, সংস্কৃতের নিয়মে, ক + ষ = ক্ষ, এবং নিয়মটা একটু শিথিল ক’রে Maxmüller মোক্ষমূলর আর Shakespeare শেক্ষপীর। Linux-ও তাই লিনক্ষ।) শিখতে শিখতে হঠাৎ মনে হওয়া যে যা-যা কষ্ট করে ঘেঁটে বের করতে হচ্ছে তা এক জায়গায় লিখে রাখলে আর কারুর সুবিধে হতে পারে। সে থেকেই ‘লিনক্ষের খেরোখাতা’র জন্ম এবং পূর্ণবিকশিত হবার আগেই মৃত্যু।
প্রাত্যহিক কাজে সেই লিনাক্সের সমস্যা-সমাধানের কাহিনি এই লিনক্ষের খেরোখাতা।

পেশার কারণে খবরের কাগজে কাজ করতে হলেও অনুরোধ-উপরোধে এবং টঙ্কার বিনিময়ে অনেক সময়ই কিছু অনুবাদ বা তর্জমার কাজ করতে হয়েছে। অনুবাদের কোনও নিয়ম নেই; কিন্তু চিন্তা করবার অনেক অবকাশ আছে। সেকারণে আরও একটি ব্লগের জন্ম হয়েছিল: ‘রোজনামা-এ-তর্জুমা‘। রোজনামা (روز نامه) শব্দটি রোজনামচা (روزنامچه)-র প্রকারভেদ; আলাদাভাবে বাংলায় এর তেমন একটা প্রচলন নেই। অন্য শব্দের তল্পিবাহক হলেই তাকে আমরা বেশ চিনি: শাহনামা, বাবুরনামা, আকদনামা, তালাকনামা, আমলনামা, মোখতারনামা, ওসিয়তনামা, ওকালাতনামা, ইশতিহারনামা, একরারনামা, হুকুমনামা, হলফনামা, সফরনামা, দাবিনামা, দাখিলনামা, রাজিনামা প্রভৃতি শব্দের সুরত দেখে চিনে নিতে বা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না, অন্তত নামা-র অর্থ। বাংলার শিরনামা, যা প্রায়শই শিরোনাম, আসলে নামা-রই জ্ঞাতি, সর-নামা। রোজ তো অনেকদিন থেকেই বাংলার সফরসঙ্গী। এবং এই ব্লগেরও মৃত্যু।

এদিকে গল্পের যেমন বই হয়, আবার বইয়েরও তেমনি গল্প হয়। বিশেষ করে বই সংগ্রহের গল্প, বই পড়ার গল্প এবং বই হারানোর গল্প। তেমনই কিছু গল্প ছিল ‘বইয়ের গল্প’ ব্লগে। শুরুটা ছিল একটি বইয়ে পাওয়া গল্প দিয়ে...

‘দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের একজন সংগ্রাহকের একটি লোকের সঙ্গে আলাপ হবার পর সেই লোকটি নাকি জানালো যে তার বাড়িতে বহু বছর ধরের সযত্নে রাখা একটি বাইবেল অল্পদিন আগে সে ফেলে দিয়েছে। কে এক “গুটেন...কি যেন” সেই বাইবেলটির মুদ্রক। গ্রন্থপ্রেমী ভদ্রলোক আতঙ্কিত হয় বললেন - “গুটেনবার্গ নয়ত! তা হলে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থটির একটি কপি ফেলে দিয়েছেন। মাত্র কয়েকদিন আগে তার আরেকটি কপি নিলামে বিক্রি হয়েছে চল্লিশ লক্ষ মার্কিন ডলারে।” এ-কথা শুনেও বিন্দুমাত্র বিচলিত হল না সেই লোকটি। সে বলল — আমার বইটির দাম খুব বেশি হলে দু “ডাইম” (এক ডলারের দশা ভাগের এক ভাগ) হত। কারণ মার্টিন লুথার বলে একজন লোক বইটির পাতায় পাতায় টীকা-টিপ্পনী লিখে নোংরা করে রেখেছে।’

শুধুই একটি গল্প। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির প্রকাশিত দীপঙ্কর সেন-এর ‘মুদ্রণচর্চা’ থেকে নেওয়া। এদিকে হঠাৎই মনে হল বিষয় নির্দিষ্ট করে ব্লগ লেখার হ্যাপা অনেক। অনেক ভাল সব ব্লগকে এক করে দেওয়া। বাংলা ভাষা’র ব্লগটা থেকে গেল; সাথে থেকে গেল Notes from Newsroom এবং Bangla Haraph ব্লগ দু’টো। বাকিগুলো এক ক’রে এই নতুন ব্লগ।

থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়; তিনটি শব্দ এবং আবার সেই তিনটি শব্দ, উলটো দিক থেকে। কিন্তু মানে কি? যা তাই-ই। এদিক থেকে আর ওদিক থেকে। চোখে পালটানোর স্বপ্ন দেখায় কিন্তু আদতে পরিবর্তন আনে না। জিভে নতুন স্বাদের স্বপ্ন দেখায় কিন্তু স্বাদ পালটায় না। অর্থাৎ যা আছে তাই-ই। আমাদের যাপিত জীবন। পালটানোর আভাসের মাঝে আবার সেই পুরনোর গন্ধ। ফরাসিদের চোখে ব্যাপারটা বোধ করি বেশ ভাল ধরা পড়েছিল: plus ça change, plus c’est la même chose. জিনিস পালটায়, তবে আদতে পালটায় না। আরেকটি অর্থও কিন্তু আছে। খাড়া, বড়ি আর থোড় তিনটিই অকিঞ্চিৎকর, নগন্য, প্রায় মূল্যহীন। মানুষের যাপনও তাই। সেই একই তালিকা থেকে মাঝেমাঝে দু-একটির আগাপিছু আর জীবনে কোনও কিছুরই তেমন দাম নেই। অনেক দামি কোনও কিছুর মুহূর্তের নগন্য কিছুর শর্তসাপেক্ষে অকিঞ্চিৎকর হয়ে পড়ে। একেই ইংরেজিতে কি hackneyed mundanity বলে?