9/10/2008

বই: তিন পুস্তকের কাহিনি

উইলিয়াম কেরির অভিধান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু গ্রন্থকেন্দ্রে একটি বই ছিল বেশ অনেক দিন ধরেই। তখন বোধ করি গেল শতকের নব্বই; একানব্বইও হতে পারে। পয়সা জমিয়ে কিনে ফেলার সে কি আনন্দ! উইলিয়াম কেরির বাংলা-ইংরেজি অভিধানের প্রথম খণ্ড, দিল্লির এশিয়ান এডুকেশনাল সার্ভিসেস-এর প্রতিলিপি ছাপ, ইংরেজিতে যাকে facsimile print বলে। বইটির দাম ষোলশ’ টাকা। মলাটের প্রান্ত ছিল কিছুটা ছেঁড়া, আর প্রচ্ছদ মলিন, দুয়েক জায়গায় কিসের যেন দাগ। অন্তত বইটির চেহারা খুব একটা খাপসুরত নয়। পাশে দাঁড়ানো আরেক ছাত্র বইয়ের দাম শুনেই শুষ্ক হাসি, যেন এত দাম দিয়ে এই রকম বাজে বই কেনার কোনও অর্থ হয় না।

উর্দুতে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস: গেল শতকের নব্বইয়ের প্রথম দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসের বইমেলা। মেঝেতে ছড়ানো-ছিটানো বইয়ের স্তুপ। মাঝে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র বাঙ্গালা আদব কী তারীখ (بنگلا ادب کى تاريخ), উর্দুতে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। বাঁধাই-ভাঙ্গা, সুতো বের-হওয়া, মলাট ছেঁড়া, মলিন প্রথম সংস্করণের (পরে বোধ করি আর কোনও সংস্করণ হয় নি) দশ-পনেরটা কপি। পকেটে শ’ দুয়েক টাকা। বাসায় ফেরার পয়সা বাদ দিয়ে কিনতে পারলেই কেল্লা ফতে। বিক্রেতার প্রশ্ন, ক’টা কিনবেন? সাধারণত মানুষ ক’টা একই বইয়ের কয় কপি কেনে? আর কাউকে দেবার জন্য হলে একটা বেশি। হয়ত। কিন্তু উর্দুতে লেখা বাংলার ইতিহাস! যাই হোক, দাম আট টাকা, ১৯৬০ সালের বইয়ের গায়ের দামের বিশ বা পনের শতাংশ। একটাই। পরে আঠা দিয়ে প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠা জুড়তে হয়েছিল পড়বার জন্য।

শেক্ষপিরের নাটক: তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্বের শেষের দিক। নীলক্ষেতের পুরনো বইয়ের দোকান থেকে একটি বই কেনা। নাম শেক্সপিয়ার’স লাস্ট প্লেজ়। দাম পঁচিশ টাকার মত। ঠিক মনে নেই। মলাট পোকায় কাটা, ভেতরের পাতাগুলোও একই রকমের এবং এতখানি যে পড়তে গেলে চোখে চাপ পড়ে। লেখক ই, এম, ডব্লিউ, টিলিয়ার্ড। লন্ডন থেকে চ্যাটো অ্যান্ড উইন্ডাসের ছাপানো, ১৯৫১ সালে। বছর দশেক পরে বইটি আবার বাঁধাতে হয়েছিল। নয়ত নষ্ট হয়ে যেত। বইটির প্রথম পাতায় ইংরেজিতে লেখা 'পাসড ফর মুনীর চৌধুরী;' নিচে সই এবং সিলমোহর, সুপারিন্টেন্ডেন্ট, দিনাজপুর জেল। একপাশে সিল সেন্সর্ড অ্যান্ড পাসড, সইয়ের নিচে সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিস, দিনাজপুর, ডি, আই, বি। ভেতরে আখ্যাপত্রে একই রকম সিল এবং সই। পাশে কলমের মোটা দাগে লেখা মুনীর চৌধুরী ১৯৫২। তারও নিচে লেখা, দিনাজপুর জেল জুন, ১৯৫২। মুনীর চৌধুরী সে সময়টাতে দিনাজপুর কারাগারে বন্দি ছিল।